
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরও প্রথম আলো ডটকমকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক আজ বেলা সোয়া তিনটার দিকে সাভারে ভবনধসের উদ্ধার তৎপরতার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষের মাইকে রানাকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘যে মানুষরূপী পশুটি এখানে মরণফাঁদ তৈরি করেছিল, দেশ ছেড়ে পালানোর সময় তাকে বেনাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
এ ঘোষণার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত উদ্ধারকর্মী ও জনতা ‘ফাঁসি ফাঁসি’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
খুলনায় নিষ্ফল অভিযান
খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, রানা খুলনায় পলাতক আছেন—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-পুলিশের একটি দল খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার ৮ নম্বর সড়কে জনৈক মোস্তফা মল্লিকের ১৩৯-এ ও ১৩৯-বি নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। পৌনে এক ঘণ্টা ওই দুটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সোহেল রানাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভবনধস
দুটি মামলা
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে রানা প্লাজার অভ্যন্তরে যুবলীগের নেতা গাজী আবদুল্লাহ খুনের ঘটনায় আসামি ছিলেন রানা। তবে তদন্তের পর পুলিশ অভিযোগপত্র থেকে রানার নাম বাদ দেয়। ২০০৮ সালে ভিপি হেলাল গুম ও হত্যার অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সাভারের মাদক ব্যবসায়ী মুন্না ছিল তাঁরই আশ্রয়ে। কিছুদিন আগে মুন্নার মৃতদেহ পাওয়া যায় সাভারের একটি জলাশয়ে। ধারণা করা হয়, তিনি গুপ্তহত্যার শিকার।
News24
তথ্য পেতে স্বজন আটক
জাহাঙ্গীরের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত বুধবার ভবনধসের পর জাহাঙ্গীর স্ত্রী মুন্নিকে নিয়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের ঝিটকা এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে যান। গত বৃহস্পতিবার সাভার থানার পুলিশ সেখান থেকে তিন মাসের শিশুসহ মুন্নি ও তাঁর আত্মীয় আনোয়ারকে আটক করে। এর পর শুক্রবার জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়।
পারিবারিক ইতিহাস
পরিবারের সম্পদ
সাভার পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে, রানা প্লাজার নির্মাণ শুরু হয় ২০০৭ সালে। এর আগে জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত। পেছনের দিকে ছিল জলাশয়। ভবন নির্মাণ করার আগে বালু ফেলে ভরাট করা হয়। রানা প্লাজার উদ্বোধন হয় ২০১০ সালে। অভিযোগ রয়েছে, ভবনের পেছনের অংশ দখল করেছিলেন রানা। সাভার পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজার পেছনের অংশ সরকারি খাল হিসেবেই দেখেছেন তিনি। যার নাম ছিল সাধাপুর খাল। সেটি দখল করে ভবন নির্মাণ করেন রানা।মুরাদ জংয়ের সঙ্গে সখ্য
রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই—গণমাধ্যমে এ বক্তব্য দিয়েছেন সাভারের সাংসদ তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ। কিন্তু সাভার আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মুরাদ জংয়ের পক্ষে হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ রানার নেতৃত্বেই হতো। রানা প্লাজা ধসে পড়ার দিনও মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল।এ ছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদসহ সব ধরনের উৎসবে সোহেল রানা যেসব পোস্টার ছাপিয়ে টানিয়েছেন, তার সবগুলোতেই মুরাদ জংয়ের ছবি বড় করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পোস্টার এখনো সাভারে রয়েছে। তবে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর রানার সন্ত্রাসী বাহিনী অনেক পোস্টার তুলে ফেলেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, রানাকে পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক করেন মুরাদ জং। এখন ভবনধসের পর যখন সোহেল রানাকে গ্রেপ্তারের তীব্র দাবি উঠেছে, তখনো রানাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন মুরাদ জং।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশারাফ উদ্দিন খান বলেন, রানা কোনো রাজনীতিবিদ নন। ক্যাডার এবং সাংসদ মুরাদ জংয়ের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেন। সারাক্ষণ সাংসদের সঙ্গে থাকেন রানা। তিনি অভিযোগ করেন, মুরাদ জং টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের পদ বিক্রি করেন। রানার কাছেও পদ বিক্রি করেছেন।
source: prothom-alo
0 comments:
Post a Comment