Friday 26 April 2013

গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য বিকৃতভাবে এসেছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, ‘গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ওই দিন সকাল সাড়ে আটটায় যখন হরতাল বলবত্কারীরা তাঁদের তথাকথিত হরতাল বলবত্করণের লক্ষ্যে সেই ইমারত প্রাঙ্গণের ফটকসংবলিত কলামে ধাক্কাধাক্কি করেছিলেন, সেটা তাঁরা না করলেও পারতেন।’ তিনি বলেন, ‘যখন তারা দেখছে, একটি দৃশ্যমান ইমারতে ফাটল ধরেছে, তখন সেখানে উপস্থিত হয়ে এ ধরনের ধাক্কাধাক্কি অমানবিক। কিন্তু গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য এভাবে আসেনি।’

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 
মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ‘আমার বক্তব্য গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি নাকি বলেছি, হরতাল সমর্থনকারীরা ধাক্কাধাক্কি করে ইমারত ভেঙে ফেলেছে। আমি আরও আশ্চর্য হয়েছি যে, তাঁরা জনগণের ওপর আস্থা না রেখে নিজেদের রাজনীতিবিদ ও সমাজবিদ বানাতে চেয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেছে, আমি বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী। একজন জাতীয় নেতার বক্তব্য বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন না করলে দেশে যে কত বড় বিশৃঙ্খলা আসতে পারে, আমার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করাই এর প্রমাণ। দয়া করে বিকৃতভাবে সংবাদ উপস্থাপন করে দুষ্কৃতকারীদের সহায়ক হবেন না।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় সংবাদমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হয়ে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান।
মহীউদ্দীন খান বলেন, ‘আমি যে কথাগুলো বলব, দয়া করে সেগুলো বিকৃতভাবে উপস্থাপন করবেন না। ঘটনাটি সাম্প্রতিক, এ ঘটনাটি মর্মান্তিক। ঘটনাস্থলে বলেছিলাম, জাতির জন্য সাভারের ঘটনা এ বছরের সবচেয়ে শোকাহত ঘটনা। এ ঘটনায় যাঁরা দায়ী বা দায়ী বলে সাব্যস্ত হবেন, তাঁদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে বিচারে সোপর্দ করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের প্রধানের নির্দেশে সেখানে ত্রাণ ও পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া শুরু করি। তখন একটি বিশেষ গোষ্ঠী কর্তৃক আহূত হরতাল এবং হরতাল সফলে নিয়োজিত কর্মীগণ আমাদের কাজে বাধা দেয়। যদি তারা না দিত, তাহলে সরকার, আওয়ামী লীগ, উদ্ধারকর্মী ও জনগণের তরফ থেকে আরও দ্রুততার সঙ্গে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে পারতাম।’ 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পোশাকশিল্পকে আমাদের বিশ্বমানের দিকে নিয়ে যেতে হবে। এ কারণে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের নামে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না, যেন সেটা আমাদের পোশাকশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ শিল্প রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।’
গত বুধবার সাভারে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘দুর্ঘটনার আগে কিছু মৌলবাদী ও বিএনপির ভাড়াটে লোক সাভারের ভবনটির গেট ও বিভিন্ন স্তম্ভ ধরে নাড়াচাড়া করেছিল। ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে এটিকেও একটি কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’ 
এ বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার জের ধরে সাংবাদিকেরা গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তথাকথিত হরতাল-সমর্থক লোকজন কারখানা বন্ধ করার জন্য ফাটল ধরা স্তম্ভ নিয়ে টানাহেঁচড়া করে। এর ফলে ধস হয়েছে কি না বা ধস ত্বরান্বিত হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘এ রকম ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখছি।’ তিনি এ-ও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
ক্র্যাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান লাবলুর সভাপতিত্বে অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বেনজীর আহমেদ, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ আকন প্রমুখ।

0 comments:

Post a Comment