Friday 26 April 2013

সাভার দুর্গতদের পাশে শিল্পীরা, মেরিল-প্রথম আলো তহবিলে ৫৪ লাখ টাকা

এগিয়ে এলেন শিল্পীরা, হাত বাড়ালেন সংস্কৃতিসেবীরা। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১২-এর আজ শুক্রবারের সন্ধ্যাটি পরিণত হলো ‘সাভার দুর্গতদের জন্য সংস্কৃতি’ অনুষ্ঠানে। সংগৃহীত হলো ৫৪ লাখ টাকা।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিকেল থেকেই ছিল শোকের পরিবেশ। বাইরে ঝুলছিল ‘আমরা শোকার্ত’ ব্যানার, হাজারো দর্শক প্রত্যেকেই কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রবেশ করেন মিলনায়তনে। মঞ্চে সবাইকে স্বাগত জানানোর সময় বারবার মনে পড়ছিল ১৯৭১ সালের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত কনসার্ট ফর বাংলাদেশের কথা। সেই আদলে এটিকে ‘কনসার্ট ফর সাভার ভিকটিমস’ করার চিন্তার কথাটি সবাইকে জানিয়ে দিই। এক মিনিট নীরবতা পালন করে সাভারে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের জন্য শোক প্রকাশ করেন সবাই।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান জানালেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক কর্মীদের একদিনের বেতন থেকে দুই লাখ টাকা আর মেরিল-প্রথম আলো তহবিল থেকে দুই লাখ টাকা দিয়ে আমরা একটা তহবিল শুরু করছি। এরপর স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ঘোষণা করেন ১০ লাখ টাকা অনুদানের কথা। তারপর শিল্পী ও কলাকুশলীরা একে একে ঘোষণা করতে থাকেন তাঁদের অনুদানের কথা।
উল্লেখ্য, প্রথম দিন থেকেই প্রথম আলো বন্ধুসভা, প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ওষুধ ও সরঞ্জাম নিয়ে কর্মীরা ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালগুলোতে কাজ করে চলেছেন।
সাভার দুর্ঘটনায় অনেকেই আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিত্সা ও পুনর্বাসনের জন্য দরকার হবে অনেক টাকা। মেরিল-প্রথম আলোর এই তহবিল থেকে এই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো হবে।
আজ মেরিল-প্রথম আলোর অনুষ্ঠানে শিল্পী ও সংস্কৃতিসেবীরা যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাতে আমরা অভিভূত। যদিও চিরকালই বাংলাদেশের শিল্পীরা আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে এসেছেন। আজ ওই অনুষ্ঠানেই চ্যানেল আইয়ের ফরিদুর রেজা সাগর পাঁচ লাখ, রুনা লায়লা-আলমগীর দম্পতি দুই লাখ, চলচ্চিত্র তারকা দম্পতি অনন্ত ও বর্ষা পাঁচ লাখ, ট্রান্সকম গ্রুপ পাঁচ লাখ, শিল্পী ফেরদৌসী রহমান এক লাখ, সৈয়দ আবদুল হাদী এক লাখ, চিত্রনায়িকা সাংসদ কবরী এক লাখ, মুকিমস ক্রিয়েশন দুই লাখ, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার শামীম ৫০ হাজার, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ৫০ হাজার, মোশাররফ করিম ৫০ হাজার, তারিন ৫০ হাজার, কুসুম শিকদার এক লাখ, শিল্পী ভাবনা ৫০ হাজার, শিল্পী বাঁধন ৫০ হাজার, কবির বকুল-দিনাত জাহান দম্পতি ৫০ হাজার, পণ্ডিত রামকানাই দাস ২০ হাজার, মিশা সওদাগর ৫০ হাজার, কানিজ আলমাস এক লাখ, প্রচিত বিজ্ঞাপনী সংস্থা ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। নায়ক সাকিব খান ৫০ লাখ পূর্ণ করতে যা লাগবে, তা দেবেন বলে ঘোষণা দেন। শিল্পী জয়া ও জাহিদ হাসান টাকার অঙ্ক না বলে এই তহবিলে অংশ নেবেন বলে জানান। এভাবে অনুদানের ঘোষণা আসতে থাকে। একপর্যায়ে দেখতে পাই তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ লাখ টাকা। 
জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমি প্রথম দিনেই সাভারে আহত মানুষের জন্য রক্ত দান করে এসেছি।’ মামুনুর রশীদ শিল্পীদের প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানান। মিশা সওদাগর সব শিল্পীকে আহ্বান জানান দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
সাভার দুর্গতদের জন্য মেরিল-প্রথম আলোর এই তহবিলে যে কেউ অনুদান দিতে পারেন। প্রথম আলো কার্যালয়ে যোগাযোগ করে এই অনুদান দেওয়া যাবে।
যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না। এমন অসহায় আমরা আর কোনো দিনও বোধ করেছি কি না জানি না। কিন্তু একজন মানুষের জন্য যদি কিছু করতে পারি, একটি অসহায় পরিবারের পাশেও যদি দাঁড়াতে পারি, এক ফোঁটা অশ্রুও যদি মুছে দিতে পারি, তা-ই বা কম কী! 
অনুষ্ঠানের শেষে চঞ্চল চৌধুরীর গাওয়া ভূপেন হাজারিকার গান ‘মানুষ মানুষের জন্য’ বাজছিল। মনে হচ্ছিল, মানুষের জন্য যদি কিছু করতে পারি, তাহলেই আমরা মানুষ। আর আমাদের শিল্পীরা যখন এগিয়ে আসেন, তখন সেটা সৃষ্টি করে বড় অনুপ্রেরণা।
সাভার বিপর্যয়ের শোকের কোনো সান্ত্বনা নেই, কিন্তু আমাদের চেষ্টা তো আমাদের চালিয়ে যেতে হবেই।

0 comments:

Post a Comment