Tuesday 30 April 2013

এ বিজয় নারীর: স্পিকার, প্রথম নারী স্পিকার হলেন শিরীন শারমিন

সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ শিরীন শারমিন চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার স্পিকার পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। 
News24
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ইতিহাসে শিরীন শারমিন প্রথম নারী স্পিকার। এর আগে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ইতিহাসে সংরক্ষিত নারী কোটার কোনো সাংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ বা হুইপ নির্বাচিত হওয়ার নজির নেই।
আজ বিকেল সোয়া পাঁচটায় ভারপ্রাপ্ত স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী স্পিকার পদে শিরীন শারমিনের নাম প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সংসদের হুইপ সাগুফতা ইয়াসমীন। 
এ সময় ভারপ্রাপ্ত স্পিকার বলেন, স্পিকার পদে নির্বাচনের জন্য মাত্র একটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় শিরীন শারমিনকে স্পিকার পদে নির্বাচন করা যেতে পারে। এরপর শওকত আলী সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রস্তাবটি ভোটে দেন এবং তা সর্বসম্মতভাবে কণ্ঠভোটে পাস হয়। 
জাতীয় সংসদের স্পিকার মো. আবদুল হামিদ ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর স্পিকারের পদটি শূন্য হয়।

এ বিজয় নারীর
রাতে অধিবেশন শেষে সংসদের শপথকক্ষে নবনির্বাচিত স্পিকারকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, হুইপ এবং সাংসদদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। 
শপথ শেষে নিজ কক্ষে শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আনন্দিত। সম্মানিত। সাংবিধানিক এ পদে নারী হিসেবে স্পিকারের দায়িত্ব পাওয়ায় ও সুযোগ করে দেওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে। এ অর্জন দেশের সকল নারীর। এ বিজয় নারীর।’ 
বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্পিকার বলেন, ‘আগামী অধিবেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি অধিবেশনে যোগ দিয়ে বিরোধী দল আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’ 

সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবন
শিরীন শারমিন চৌধুরী সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৩১ এর সদস্য। ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এক-এগারোর সরকারের সময় শেখ হাসিনা যখন কারারুদ্ধ ছিলেন, তখন তাঁর আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ছিলেন শিরীন শারমিন।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করলে শিরীন শারমিন ২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী কোটায় সাংসদ নির্বাচিত হন এবং সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে তাঁকে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 
শিরীন শারমিন চৌধুরী ১৯৬৬ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রফিকউল্যাহ চৌধুরী, মা নাইয়ার সুলতানা। তিনি ১৯৮৩ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে এসএসসি এবং ১৯৮৫ সালে একই বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে (সম্মান) এবং ১৯৯০ সালে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। দুটিতেই তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। এ ছাড়া তিনি ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি (পিএইচডি) নেন।
শিরীন শারমিন ২০০০ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল লিগ্যাল এডুকেশন উপকমিটির সদস্য এবং ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য নির্বাচিত হন

source: prothom-alo

0 comments:

Post a Comment