Thursday, 25 April 2013

দুইডা ভাতের জন্য সবাইরে হারাইছি...!!!

দুইডা ভাতের জন্য আমি সবাইরে হারাইছি! আমি এহন কী কইরা খামু?’ চৌদ্দ বছরের কিশোর রুবেল তার বড় বোন পপি ও ভগ্নিপতি ফরহাদকে হারিয়ে এভাবেই চিত্কার করে কাঁদছিল অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের বারান্দায়। 
একপর্যায়ে রুবেল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। স্বজনেরা কিশোর রুবেলের চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন। জ্ঞান ফিরতে না ফিরতে আবার কান্না শুরু হয় রুবেলের। রুবেলের এক আত্মীয় মিলন জানান, রুবেল মানসিক প্রতিবন্ধী। কানেও কম শোনে। তার বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ নেই। বড় বোন পপি ও ভগ্নিপতিই ছিল তার অভিভাবক। এখন সে কী করবে, কার কাছে থাকবে—এটাই বড় প্রশ্ন।
মিলন জানান, রানা প্লাজার তৃতীয় তলার পোশাক কারখানায় রুবেলের বড় বোন পপি ও ষষ্ঠ তলায় ভগ্নিপতি ফরহাদ কাজ করতেন। 
রুবেলের মতো হাজারো স্বজনহারা মানুষ লাশের সন্ধানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে শত বছরের পুরোনো অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের নানা প্রান্তে। রানা প্লাজা থেকে লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রবেশ করামাত্র তারা ছুটে যাচ্ছে সেখানে। স্বজনের ছবি হাতে নিয়ে একেকজন খবর নিচ্ছে এখানকার অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকক্ষে। আবেদ আলী সরকারও এভাবেই নিয়ন্ত্রণকক্ষে বারবার ছুটোছুটি করছিলেন স্ত্রী শামীমার সন্ধানে। ছবি দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার জিজ্ঞাসা করছিলেন, তাঁর স্ত্রীর কোনো সন্ধান পাওয়া গেছে কি না।
আলী সরকার প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘ভাই, কালকে থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই খাই নাই। ওটা সমস্যা না, যদি স্ত্রী শামীমার সন্ধান পেতাম।’ তিনি বলেন, ‘রাতে আমি রানা প্লাজার পাশে ছিলাম। রাত তিনটার সময় ওখান থেকে অনেক লাশ বের করা হয়। সেগুলো কোথায় গেল? মনে হচ্ছে, আমি এখন মারা যাব।’ 
প্রচণ্ড গরমে অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে রাখা লাশগুলোতে পচন ধরেছে। এ দুর্গন্ধ চারদিকে ছড়াচ্ছে। কোনো কোনো লাশ ফুলে উঠছে। লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। মাইকে বলা হচ্ছে, যাঁরা এখনো স্বজনের সন্ধান এখনো পাননি, তাঁরা যেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করেন।


0 comments:

Post a Comment