Wednesday 1 May 2013

‘কাজ না করলে খামু কি?’

মে দিবস তো কী হইছে! কাজ না করলে খামু কি?’
আজ বুধবার সকালে এ কথা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মিজানুর সওদাগর। পেশায় তিনি দিনমজুর। মহান মে দিবসের এই দিনে যখন সারা বিশ্ব নিপীড়িত শ্রমিকদের স্মরণ করছে, মিজানুর তখন রাজধানীর মিরপুরে একটি পুরোনো ভবন ভাঙার কাজে হাতুড়ি চালাচ্ছিলেন।
প্রতিদিনের মতো বৈশাখের প্রচণ্ড গরমে ত্রিশোর্ধ্ব মিজানুরের শরীর গড়িয়ে অঝোর ধারায় ঘাম নেমেছে। তাঁর সঙ্গে থাকা সোহেল রানা, এমদাদুল, আজিজুলরা একইভাবে তৃতীয় তলা ভবনটি ভাঙছিলেন। এই শ্রমের বিনিময়ে আসবে মজুরির টাকা। তা দিয়ে চলবে জীবিকা, সচল থাকবে সংসারের চাকা।
মে দিবসের ইতিহাস পুরোপুরি জানা নেই মিজানুরের। তবে শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করার দাবি আদায়ের কথা জানেন তিনি। মিজানুর বলেন, ‘আইজ সবাই কয় কাজ করা ঠিক না। তয় আমাগো ট্যাকা কেডা দিব, হেইড্যা কেউই কয় না। আর ট্যাকা না পাইলে খামু কি?’ 
News24
মিজানুর জানান, তাঁদের প্রতিদিনের মজুরি ৩০০ টাকা। তাঁদের মালিক সগীর সওদাগর তৃতীয় তলার এই ভবন ভাঙার ঠিকাদার। এক দিন কাজ না করলে মজুরির টাকা দেবেন না মালিক। টাকা না পেলে খাওয়া তো দূরে থাক, বাসা ভাড়া জোগাড় করা কষ্টকর। মিজানুর বলেন, ‘মজুরির টাকা থ্যাইক্যা কিছুটা রাইখ্যা দিয়া বাগেরহাটে গেরামের বাড়ি পাঠামু।’
মিজানুরদের দাবিতেই আজ মে দিবসে কাজ করানো হচ্ছে বলে দাবি করেন সগীর সওদাগর। তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, ‘আজ কি শ্রমিকদের বোনাস দেয়া যেত না?’ জবাবে মাথা চুলকাতে থাকেন সগীর।
মোহাম্মদপুরে একটি সিমেন্টের দোকানের রিকশাভ্যানের চালক বজলুর রহমান বলেন, ‘একটা বিল্ডিংয়ের ঢালাই হবে, তাই ভ্যানে সিমেন্ট নিয়া যাইতাছি। মে দিবসের কথা কইছি মালিকরে। কিন্তু কোনো কাজ হয় নাই।’
সরকারি কাজের দিনমজুর হারুন মিয়া অবশ্য কাজ করতে না পেরে খুব মন খারাপ করেছেন। কোদাল-টুকরি নিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি জানান, শেওড়াপাড়ায় কেবল বাসানোর কাজ করছেন এখন। তবে মে দিবসে যে কাজ হবে না, তা গতকাল তাঁদের জানানো হয়নি। তাই কর্মস্থলে গিয়েও মজুরিশূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে পঞ্চাশোর্ধ্ব হারুন মিয়াকে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাই, এমনিতেই সরকারি কাজে মজুরি কম, দিনে মাত্র ২৮০ টাকা, তার ওপর আজ কাজ বন্ধ। ট্যাকা তো আর এমনি এমনি দিব না। এখন কী করুম? মে দিবস আমাগো লাইগ্যা না।’

source: prothom-alo

0 comments:

Post a Comment